কবি মোশাররফ হোসেন খান তার রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘’দাহন বেলায়’’ ৪৮টি কবিতা লিখেছেন। তার মাঝে চারজন মহান কবিকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি ফররুখ আহমদ, মহা কবি আল্লামা ইকবাল, কবি সৈয়দ আলী আহসান নিয়ে কবিতা লিখেছেন। এছাড়াও তিনি আরও একজন মহান ব্যাক্তিকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন । তিনি হলেন ইসলামী শিক্ষা আন্দলনের রুপকার সেনাপতি শহীদ আব্দুল মালেক । নিচে কবিতাগুলো দেয়া হলো।
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কবিতা
আকাশে তখন দূরাগত মেঘমালা অদৃশ্য স্টেশন থেকে
সবেমাত্র ওড়া শুরু করেছে। এখন পাহাড়ের চূড়া যদি
দীঘির জলের মতো ঢেউ তুলে ক্ৰমাগত সম্মুখগামী
হয়; তবুও তা আমাদের দৃশ্যাতীত। একটি কবুতরকে
উড়ে যেতে দেখলাম পাহাড়ের দিকে । পাহাড় তাকে স্বাগত
জানিয়ে এক অসম বারান্দায় পিঁড়ি পেতে দিল । তারপর—
কবুতরকে আকাশ দেখিয়ে বললো : আকাশের মতো হও ।
নীল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো : সমুদ্রের মতো হও ।
কবুতর কোনোদিন সমুদ্র হবে না। এমনকি আকাশের
বুকও স্পর্শ করতে পারবে না— এই ভেবে মাটির সবুজে
নীড় বেঁধে নিল । তার প্রসবিত ডিম থেকে এখন প্রত্যহ
বেরিয়ে আসে সহস্র চকচকে বাচ্চা। সূর্যের মতো লাল ঠোঁটে
ওড়ায় তারা অদ্ভুত নক্ষত্র আর গোলাপী পায়ের পাতায়
হাওয়ায় দোল খায় বৈশাখী ঘুড়ির মতো শুভ্র মহাদেশ ৷
এখন উর্ধে তাকাও । দেখ, অদৃশ্য হাতের এক কারুকাজ :
কবুতরের রূপোলী ডানা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না ॥
আরও পড়ুন–নারী কবিতা। মানুষ নই, আমি নারী। অভিশপ্ত সুশীল। অপয়া তুই
কবি ফররুখ আহমদকে নিয়ে কবিতা
সমুদ্রের নাভি থেকে উত্থিত প্ৰচণ্ড দীর্ঘশ্বাসে
কমে যেতে পারে পৃথিবীর আয়ু
সহসা ফিরে দাঁড়ান সমুদ্র নাবিক
হাতের মুঠোয় তাঁর সামুদ্রিক রূপোলী ঝিনুক
ঝিনুকের পেটে অপেক্ষমান অদৃশ্য এক সাহসী ঈগল
সাতটি সাগর—
চলমান পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাস
মাস্তুলে দাঁড়িয়ে ‘সাত সাগরের মাঝি’
পাটাতনে ঘাই মারে আরণ্যক ভয়
কেউ যেন ডাকে :
থামো মাঝি, দেখ ঝড়ের উল্লাস
ঝড়! ঝড়তো উজ্জ্বল সাহসের প্রতীক, সমুদ্র স্বভাব
নাবিক ফিরে দাঁড়ান উন্মত্ত ঝড়ের মুখোমুখি
বিস্মৃতির সীমানা পেরিয়ে অসীমের দিকে
নাবিকের চাহনিতে ফাঁক হয়ে যায় দরিয়ার নোনা পানি
পানির গভীর থেকে উঠে আসে উজ্জ্বল পাথর
বস্তুত কবি তিনি—
অনন্তের শুদ্ধতম কবি
কবিকে নিয়ে চারটি কবিতা
কবি সৈয়দ আলী আহসানকে নিয়ে কবিতা
বহুকাল দিয়েছেন আলো-ছায়া শিল্পের সুষমা
সিক্ত করেছেন এই বাংলার আবাদের জমি
সে ছিল তৃষ্ণার বৃষ্টি । হতে পারে উপল উপমা
কিম্বা তারও অধিক—বহুবর্ণ, অনির্ণীত ছবি ।
বহুদর্শী কালবৃক্ষ । আর এই উপমহাদেশে
পৃথক প্রবর । যেন তিনি অরণ্যের সেনাপতি,
দাঁড়িয়ে আছেন সম্রাট এক স্বতন্ত্র, রাজ বেশে ।
নাকি বিশাল জলধি— তীরভাসা স্রোতোবাহী নদী !
প্রজ্ঞার বিভায় দীপ্তিমান, সীমাহীন অভিজ্ঞান
বৈশ্বিক ব্রাজক বটে, কণ্ঠে তবু স্বদেশী সঙ্গীত ।
সর্বত্র সুদৃঢ় পদক্ষেপ, সুশোভন অবদান –
কোন্ নামে ডাকি তাকে? আপাতত ব্যাখ্যার অতীত ।
বিপুল বিস্ময়কর! আমৃত্যু ছিলেন বেগবান
ইতিহাস, নাকি প্রবাদ-পুরুষ আলী আহসান!
আরও পড়তে পারেন–নারী কবিতা । নারী কবিতা লিরিক্স। আবৃত্তি ও ব্যাখ্যা
শহীদ আব্দুল মালেককে নিয়ে কবিতা
জীবন যেখানে মুষড়ে পড়েছে আজ
পৃথিবী হয়েছে বেদনায় চার ভাঁজ
চারিদিকে বিভীষিকা, মরুময় গ্রাম
তখন পড়েছে মনে স্বজনের নাম—
শহীদ মালেক। সে তো নাম নয়;
উত্তাল তরঙ্গ, কেবলই বরাভয় ।
দাঁড়িয়ে আছেন সাগরের রূপকার
এবং হাত তুলে ডেকে যান বারবার :
ঘুমায় কে আজ দরোজায় খিল দিয়ে
কে আছো আরুদ্ধ প্রবল প্রশ্বাস নিয়ে
ছুটে চলো রুদ্ধতার আবরণ ছিঁড়ে
ফেলো নোঙর তোমার সাহসের ভিড়ে।
পায়ে পেশো শোকতাপ দুর্বার কিষাণ
মুক্ত বিহঙ্গের মত ওড়াও নিশান ।
কে তিনি কে তিনি? কোন্ সেনাপতি?
রক্তপাথারে কে থামিয়ে দিলেন গতি?
কে বলেন : দাঁড়াও! দাঁড়াও তুফান ফুঁড়ে
তোমার উত্থান হোক মহাকাল জুড়ে ।
হাঁকিয়ে চলেন তিনি বাতাসের ঘোড়া
ডানা তার স্বপ্নমাখা তেপান্তর জোড়া ।
কে ডাকে, কে ডাকে শঙ্কাহীন কণ্ঠ কার?
শহীদ মালেক! ডেকে যান বারবার।—
কবিকে নিয়ে চারটি কবিতা
মহা কবি আল্লামা ইকবালকে নিয়ে কবিতা
মধ্যাহ্নে শুকিয়ে যায় পাললিক দ্বীপের শরীর
নদীর নিতম্ব জানে দেহে তার আরেক সন্তান
বেড়ে ওঠে ক্রমান্বয়ে । তারপর নদী ও উদ্যান
হাত নেড়ে সেই নামে বারবার ডেকেই অধীর!
ভারী হলে মেঘ বায়ু মাটি পায় মাতৃত্বের সুখ
নদীও রমণী হয়— কুলু কুলু স্রোত বহতায়
নবীন দীপ্তিতে দুলে ওঠে চাঁদ । ঘোর তমসায়
কার নামে ডাকে পাখি, জলমগ্ন পাথরের বুক?
নক্ষত্র চিনেছে তাকে; শতাব্দীর শুদ্ধতম চোখ!
ধূসর কুহেলি ছেড়ে আদিগন্ত ঊষার স্বপন
জ্বলে ধিকি ধিক বুকে তার । যার উল্লাসি চরণ
সমুদ্রের তলদেশ থেকে পরিব্যাপ্ত উর্ধলোক—
কি নামে ডাকবো তাকে? নাম তার খুঁজি অবিরাম—
শব্দেরা বলেন : থাকনা সে, ‘পৃথিবীই’ তার নাম ॥