ইসলামে নারীর মর্যাদা
“তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র (স্বরূপ)। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে (যেদিক থেকে) ইচ্ছা গমন করতে পার।[1] তোমরা তোমাদের (মুক্তির জন্য) পূর্বেই পাথেয় প্রেরণ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর। আর জেনে রাখ যে, নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহর সম্মুখীন হবে এবং বিশ্বাসিগণকে সুসংবাদ দাও।” [ সূরা বাকারা: ২২৩] ইসলামে নারীর মর্যাদা
[1] ইয়াহুদীদের ধারণা ছিল যে, যদি মহিলাকে উপুড় করে পিছনের দিক থেকে তার সাথে সঙ্গম করা হয়, তাহলে (সেই সঙ্গমে সন্তান জন্ম নিলে) তার চক্ষু টেরা হয়। এই ধারণার খন্ডনে বলা হচ্ছে যে, সহবাস সামনের দিক থেকে কর অথবা পিছনের দিক থেকে কর, যেভাবে ইচ্ছা কর সবই বৈধ। তবে সর্বক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক হল নারীর যোনিপথ ব্যবহার করা। কেউ কেউ এ থেকে প্রমাণ করেন যে, ‘যেভাবে ইচ্ছা’ কথার মধ্যে মলদ্বারও এসে যায়। কাজেই স্ত্রীর মলদ্বার ব্যবহারও বৈধ।
কিন্তু এটা একেবারে ভুল কথা। যখন কুরআন মহিলাকে শস্যক্ষেত (সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত) সাব্যস্ত করল, তখন এর পরিষ্কার অর্থ হল, কেবল ক্ষেতকে ব্যবহারের জন্য বলা হচ্ছে যে, ‘‘নিজেদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর।’’ আর এই ক্ষেত (সন্তান জন্মের স্থান) কেবল যোনিপথ, মলদ্বার নয়। মোটকথা, পায়ুমৈথুন একটি রুচি ও প্রকৃতি-বিরোধী কাজ। (তা ছাড়া হাদীসে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, স্ত্রীর পায়খানাদ্বারে সঙ্গম করা এক প্রকার কুফরী এবং) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বার ব্যবহার করে, সে অভিশপ্ত। (ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
*** এই আয়াতটির ব্যাখ্যা এ কারণে তুলে ধরা হল যে, কিছু ব্যক্তি এই আয়াতের ভুল অর্থ করে সমাজে এটা প্রচার করে যে, ইসলামে নারীদের যথেচ্ছা মন্দ আচরণের শিক্ষা দেয়। অথচ তারা জানে না ইসলাম ধর্ম নারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আগমনের পূর্বে নারীদের মর্যাদা সম্পত্তিতে ছিল না। অনেকে লজ্জায় কন্যাশিশু জীবন্ত কবর দিয়ে দিত, নারীদের সাথে পশুর মত আচরণ করত। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন:
‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ কর ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)।
কন্যা হিসেবে মর্যাদা:
মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন:
‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’
তিনি আরও বলেন: ইসলামে নারীর মর্যাদা
‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে বা তিনটা বোন থাকে বা দুটি কন্যা থাকে বা দুটি বোন থাকে; আর সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে ও তাদের ব্যাপারে (অন্তরে) আল্লাহর ভয় রেখে কাজ করে; তার বিনিময় সে চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছে যাবে।’ (তিরমিজি)।
আরও পড়ুন — তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও সময় সম্পর্কে
মা হিসেবে মর্যাদা:
ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সা.) বলেন,
‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। ইসলামে নারীর মর্যাদা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বোখারি)। ইসলামে নারীর মর্যাদা
স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা:
হযরত মুহাম্মদ(স) বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)।
কোরআনে বলা হয়েছে,
‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সুরা বাকারা : ২২৮)।
বোন হিসেবে মর্যাদা:
মহানবী (সা.) বলেছেন,
‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’
হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন। এছাড়াও একটি দীর্ঘ হাদিস থেকে এক ব্যক্তির দরিদ্র বোনের দোয়া বদদোয়ার বিষয় আমরা অবহিত হই।
পরিবার ও সমাজের প্রতিটি স্তরেই দেওয়া হয়েছে নারীদের যোগ্য মর্যাদা ও সম্মান। নিশ্চিত করা হয়েছে শিক্ষা, সম্পত্তিসহ নানান বিষয়ে তাদের অধিকার। যে সমাজে নারীদের যৌতুক বা পণপ্রথা প্রচলিত ছিল ঠিক সেই সমাজেই এগুলো বাতিল করে মোহরানার প্রচলন করে পবিত্র ধর্ম ইসলাম। তাই জ্ঞানপাপীরা ইসলাম নিয়ে ভুল প্রচার করতে চাইলে তাদের সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমেই প্রদান করুন উত্তর আর সেটা না পারলে অন্ততপক্ষে যেটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয় সেটা সম্পর্কে আলেমদের মাধ্যমে জেনে নিন অথবা কোরআন হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা সঠিক সোর্স থেকে জেনে নিন।